আরাকান আর্মির কবল থেকে মুক্ত ২ কার্গো জাহাজ টেকনাফ বন্দরে পৌঁছালো: বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দীর্ঘ ৪ দিন পর আটক করা দুটি পণ্যবোঝাই কার্গো জাহাজ মুক্ত করেছে। এই জাহাজ দুটি আজ সোমবার সকালে নাফ নদীর টেকনাফ স্থল বন্দরে এসে ভিড়েছে, যা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির সংবাদ।
গত ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি, মিয়ানমারের জান্তা শাসিত রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থল বন্দরের উদ্দেশে তিনটি পণ্যবোঝাই জাহাজ প্রেরিত হয়েছিল। এসব জাহাজ নাফ নদীর মন্ডু টাউনশীপের কাছে পৌঁছানোর পর আরাকান আর্মি সেগুলো আটক করে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, একই সময় অন্য একটি কাঠবোঝাই জাহাজ টেকনাফ বন্দরে প্রবেশের অনুমতি পায় আরাকান আর্মি থেকে।
চার দিন পর, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আটক জাহাজ দুটি মুক্তি পেয়ে টেকনাফ বন্দরে এসে পৌঁছেছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, ‘এটি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বিশাল স্বস্তির খবর, কারণ এই জাহাজগুলোতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার সমমূল্যের পণ্য রয়েছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এখনো একটি জাহাজ আসেনি, তবে দুইটি জাহাজ পৌঁছেছে এবং এর মাধ্যমে বড় ধরনের রাজস্ব আয় হবে।’
এই জাহাজগুলোতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রয়েছে, যার মধ্যে সুপারি, শুটকি মাছ, জুতা-স্যান্ডেল, বরই, তেতুলসহ বিভিন্ন ধরনের আচার অন্তর্ভুক্ত। টেকনাফ বন্দরের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘বড় আকারের এই পণ্যবাহী জাহাজগুলো বন্দরের জেটিতে পৌঁছানোয় সরকারের জন্য বিশাল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে।’
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে মংডু টাউনশীপ আরাকান আর্মির দখলে চলে যায়। এরপর থেকেই ওই অঞ্চলে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফ বন্দরে আসতে পারেনি। এর ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রায় দেড় মাস ধরে বড় চালান আসার অপেক্ষায় ছিলেন। এই পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তবে আজকের জাহাজগুলোর মুক্তির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে।
আশা করা হচ্ছে, মুক্তি পাওয়া এই জাহাজগুলোর পণ্যসম্ভার থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লাভ করবে। বিশেষত, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবস্থাও শক্তিশালী হতে পারে।
সর্বশেষ, আরাকান আর্মি যখন আটক করা জাহাজগুলো ছেড়ে দিয়েছে, তখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারছেন, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উজ্জীবিত করার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
এই ঘটনা শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। টেকনাফ বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্য পুনরায় সচল হওয়ায় দেশীয় বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়বে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।