বিএনপির সম্মেলনে দু’গ্রুপের সং ঘর্ষ, বো মা বি স্ফো রণ আ হত নেতাকর্মী—ভাঙল দলীয় ঐক্যের মুখোশ..

মাদারীপুরে বিএনপির ইউনিয়ন সম্মেলন রূপ নেয় দাঙ্গায়। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ—আহত বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ফেসবুকে ভাইরাল সেই মুহূর্তের ভিডিও।..
মাদারীপুরের রাজৈরে বিএনপির এক ইউনিয়ন সম্মেলন হঠাৎ রূপ নেয় সংঘর্ষ ও বোমা বিস্ফোরণের রণক্ষেত্রে। জেলা বিএনপির নেতাদের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে ঘটে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা, যা দলীয় ঐক্যের অন্তঃসারশূন্যতাকেই সামনে নিয়ে আসে।
গতকাল শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের কালিবাড়ি বাজারে আয়োজিত ছিল বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। আয়োজন করেছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. আবুল কালাম শিকদার। সম্মেলনের অনুমোদন ও উপস্থিতি নিশ্চিত করেন মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া, সদস্য বজলু হাওলাদার ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান।
কিন্তু দৃশ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন আসে, যখন অভিযোগ ওঠে—সাধারণ নেতাকর্মীদের না জানিয়েই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের উপেক্ষা করে পুনরায় সভাপতি পদ দখলের চেষ্টায় ছিলেন আবুল কালাম, এমন দাবি করেন প্রতিপক্ষ গ্রুপ। শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই রূপ নেয় সংঘর্ষে।
এ সময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ডা. আবুল কালামের সমর্থক গ্রুপ ও আরিফ হাওলাদার নেতৃত্বাধীন উপজেলা বিএনপির অংশ। সংঘর্ষের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা ফাটায় বোমা এবং পালিয়ে যায়, যার ফলে আহত হন জিয়া পরিষদের সদস্য মো. জিয়াউর রহমান জিয়া, আব্বাস শিকদারসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ঘটনাস্থল থেকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
জেলা বিএনপির সম্মেলন গঠনের পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় গঠিত সাতটি উপ-কমিটির ভূমিকা। প্রতিটি কমিটিতে ৩-৪ জন সদস্য থাকলেও, বাস্তবতায় তা হয়ে উঠছে বিভাজনের উৎস। স্থানীয় সূত্র ও নেতাকর্মীরা জানান, এই সম্মেলনের পেছনে লুকিয়ে আছে দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
ডা. আবুল কালাম অভিযোগ করেন, “জেলা বিএনপির অনুমোদিত প্রোগ্রামকে আরিফ হাওলাদার মানতে চায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে গ্যাঞ্জাম লাগিয়েছে, আমাকে হুমকি দিয়েছে। তিনটি গ্রুপের সংঘর্ষ ছিল এটা—মিল্টন বৈদ্য গ্রুপ, ওহাব মিয়া গ্রুপ ও আরিফ হাওলাদার গ্রুপ।”
অন্যদিকে আরিফ হাওলাদার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “আবুল কালাম আওয়ামী লীগের লোকজনকে সম্মেলনে দাওয়াত দিয়েছে। তারাই বোমা ফাটিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির অনুষ্ঠান পণ্ড করা।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. জাফর আলী মিয়ার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মিল্টন বৈদ্য জানান, “আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি করার চেষ্টা থেকেই এমন অঘটন ঘটেছে। আমি দু’পক্ষকে থামাতে চেষ্টা করেছি।”
পুলিশ প্রশাসনের দিক থেকে সরাসরি কোনো অবস্থান পাওয়া যায়নি। রাজৈর থানার তদন্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, “ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। আমাদের অফিসার রবিউল বাশার ঘটনাস্থলে দায়িত্বে ছিলেন।”
শেষ পর্যন্ত সম্মেলন ভেঙে না দিয়ে নেতারা সাত দিনের সময় নিয়ে কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।