আওয়ামী লীগ এর নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে এনসিপির বিক্ষোভ

বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, মানবিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়ে গুম-খুন-নৈরাজ্য-দূর্নীতি-গণহত্যা করে দেশকে মৃত্যুপুরী ও আর্থ সামাজিকভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়ায় আওয়ামীলীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চট্টগ্রাম।
শুক্রবার (২ মে) বিকেলে নগরীর প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিল টি চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে শেষ হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামের সংগঠক মুহাম্মদ সাঈদুর রহমানের সঞ্চালনায় ফ্যাসীবাদের আঁতুড়ঘর আওয়ামিলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ও তাদের নৃশংসতার বিচারিক কার্যক্রম অনতিবিলম্বে শুরু করার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য নীলা আফরোজ বলেন, ২০০৯ সালের পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যাকান্ড করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে আওয়ামীলীগ। সাগর রুনিকে হত্যা করে সাংবাদিকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে তারা, ২০০৮ থেকে ২০২৪ এই ১৬ বছরে ভারতের প্রেসক্রিপশনে দেশকে পরিচালিত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছে। আওয়ামীলীগের দেশবিরোধী, গণমানুষ বিরোধী এসব কর্মকান্ডের বিচার করতে হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জাওয়াদুল করিম বলেন, ২০১৩ সালের মে মাসে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা চালিয়েছে আওয়ামীলীগ, এরকম অসংখ্য গণহত্যা করেছে তারা। পিলখানা হত্যাকান্ড, সাগর-রুনি হত্যাকান্ড সহ অসংখ্য অপরাধ তারা ঘটিয়েছে। ভিন্ন চিন্তার রাজনীতিকদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত করতে এবং তাদের রাজনীতি নস্যাৎ করার জন্যে তারা গুমের মতো অপরাধ সংগঠিত করেছে হাজারে হাজারে। আর কয়টা গুম, খুন, হত্যা করলে এদের নিষিদ্ধ করা হবে? প্রয়োজনে নতুন অভ্যুত্থান হবে, তারপরও আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়েরুল আলম বলেন, সরকারকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামিলীগের বাকশালি সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন রূপে বাংলাদেশকে সাজাতে হবে। এই দায়িত্ব বাংলাদেশের তরুণ-যুব সমাজ কাঁদে নিয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে এনসিপি সোচ্চার থাকবে।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সংগঠক ইমন ছৈয়দ বলেন, বিগত ১৬-১৭ বছরে অগণিত নিরহ নিরপরাধ জনগণের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আওয়ামিলীগ। জুলাইয়ে ২০০০ শহীদ, অর্ধ লক্ষাধিক আন্দোলনকারীদের আহত করে তাদের কর্মক্ষমতা, সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামিলীগ। আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধ করার এই ঘোষণা এসেছে শহীদ পরিবার থেকে, আহতদের আর্তনাদ থেকে। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে গত ১৬ বছরে গুম-খুন ও নির্যাতিত হওয়া বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। কোন সুশীল, উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ আওয়ামীলীগের হয়ে কথা বললে তাদেরকে দেশের জনগণ মেনে নিবে না। আগামি নির্বাচনের আগেই আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করা ছাড়া কোন ধরনের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণ মেনে নিবে না। তাদের সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের উচিত ছিলো আওয়ামী প্রশ্নে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, তাদের নিবন্ধন বাতিলে আপনারা তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। আপনাদের সরকারে বসানোর জন্য জনতা আন্দোলন করে নাই। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করা, তাদের বিচার করা ও দেশকে ঢেলে সাজানোর এক মহান দায়িত্ব দিয়ে আপনাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। কিন্তু আপনারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন, অনতিবিলম্বে আওয়ামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সংগঠক জোবায়রুল হাসান আরিফ বলেন, মুজিবের জানাজায় মানুষ অংশ নেয় নাই, খুনি হাসিনা যেদিন পালিয়ে যায় সেদিনও আওয়ামী খুনীরা নৃশংসতা চালিয়ে পরবর্তীতে উপলব্ধি করে তাদের নৃশংস নেত্রী পালিয়েছে পরবর্তীতে তারাও লুকিয়ে যায়। জুলাই গণঅভ্যুথান আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে এবং বিচার করে আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন। ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা আদালতে আপনাকে সামান্য নাগরিক অধিকার দেয়নি, দেশের জনগণকে বিচারের নামে প্রহসন করেছে তাদেরকে সুযোগ দিবেন না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার সমস্ত প্রসেস হাতে নিন, নয়তো জনগণ ফ্যাসিস্ট নির্মুল করতে না পারার দায় আপনাকেও দিতে বাধ্য থাকবে। যারাই লীগকে বৈধতা দিয়েছে তারা সকলেই পরবর্তীতে করুন ফলাফল ভোগ করেছে। শহীদ জিয়া, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত যারাই তাদেরকে পুনর্বাসন করতে চেয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে। আওয়ামীলীগের হাতেই তারা নির্যাতিত হয়েছে। লীগের দূর্নীতিবাজ নেতাদের ব্যাংক একাউন্ট বাজেয়াপ্ত করলে লীগের ঝটিকা মিছিল বন্ধ হয়ে যাবে। লীগের রাজনীতি করতে দেওয়া বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার করদরাজ্য বানানোর নামান্তর। প্রয়োজনে লীগ নিষিদ্ধের জন্য গণভোট করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব শাগুফতা বুশরা মিশমা বলেন, গণহত্যাকারী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য আমাদের বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তারা দেশের স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস করেছে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে। লীগের আমলে ৪০০ টাকার পর্দা-বালিশ ১০০০০ হাজার টাকার হিসেব দিতেও দেখা গিয়েছে। তারা ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের মেধা শক্তিকে নির্মূল করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রণয়নে বাংলাদেশি ন্যারেটিভ বাদ দিয়ে ভারতীয় ন্যারেটিভ উপস্থাপন করতে দেখা গিয়েছে পাঠ্যপুস্তকে। উন্নয়নের নামে অযৌক্তিকভাবে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করেছে, বিনিময়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে ঋণের আকন্ঠ সমুদ্রে। আওয়ামী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে শেয়ার কেলেংকারী ও ব্যাংক কেলেংকারী করে দেশের পুঁজি বাজার ও আর্থিক কাঠামোকে পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছে। সীমান্তে প্রতি বছর এতো এতো মানুষকে খুন করার পরেও তারা সীমান্ত হত্যা বন্ধে জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। লীগের আমলেই হওয়া চাঞ্চল্যকর ফেলানী হত্যার আশু কোন পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। বাংলাদেশের উপর আর কোন বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিবে না। ইনকিলাব, জিন্দাবাদ
বার্তা প্রেরক
আরফাত আহমেদ রনি
মুখপাত্র, মিডিয়া উইং
জাতীয় নাগরিক পার্টি, চট্টগ্রাম
01827677376